ছোটবেলায় আলিফ লায়লা বলে একটা সিরিয়াল হত ডি ডি তে, বেসিক্যালি আরব্য রজনী। একটা এপিসোড আজও মনে আছে। সিন্দবাদ একটা চোরাবালির মত কিছু তে কোমর অবধি তলিয়ে আছে, আস্তে আস্তে তলিয়ে যাচ্ছে আরও। হাতে একটা ধনুক, আর একটাই তীর। সামনে একটা পাখি জাতীয় কিছু ঘুরছে, সেটার চোখে মারতে পারলে বেঁচে যাবে, আর ফসকালেই শেষ। সোজা তলিয়ে যাবে। আগের 2 টো তীর ফসকে গেছে, এটাই শেষ সুযোগ। সিন্দবাদের কপালে ঘামের ফোঁটা। নিজের নার্ভকে আয়ত্তে এনে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই করতে হবে। একটাই সুযোগ।
পয়লা বৈশাখ
কথায় বলে অন্ধের কি বা দিন, কি বা রাত। আমরা যারা লক্ষীসাধনায় মগ্ন হয়ে হত্যে দিয়ে বাইরে পরে আছি, আমাদের একই অবস্থা প্রায়। কবে পয়লা বোশেখ, কবে পঁচিশে, এক্সেল শীট, প্রজেক্ট ডেডলাইন আর কেপিআইয়ের চক্করে সব ঘেঁটে ঘ হয়ে যায়। একটা নিয়মে নিজেকে বাঁধতে বাঁধতে কবে যে নিয়ম-দাস হয়ে গেছি, টের ও পাইনি। মাস পয়লার মোটা মাইনে আর দিনান্তে স্কচের অমোঘ টানে নিজেকে কবেই যেন আস্তে আস্তে হারাতে শুরু করেছিলাম। আমার মধ্যের আমিটা সব ছেড়ে-ছুঁড়ে বারবার পালাতে চেয়েছে, আর তাকে আটকে রেখেছে বাইরের আমি। তাই পয়লা বৈশাখের নতুন জামা, আর পঁচিশের দিন শেষের কবিতা হাতে নিয়ে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়ার বিলাসিতা চিন্তার বাইরে আর বেরোতে পারেনি।
আশ্বিনের শারদ প্রাতে
আমি বাংলা ভাষাও ছাড়িনি, বাঙালিয়ানা ও ছাড়িনি, ছেড়েছি শুধু শহরটা। তবে ওটাও নেহাত দায় না পড়লে ছাড়তাম না।
শহর থেকে দূরে থাকার একটা খারাপ দিক হলও এখানে উৎসবের আমেজ ঠিক বোধ করা যায়না। উৎসব বলতে এখন অবশ্যই দুর্গাপূজার কথা বলছি। আজ দশ বছরের বেশি হয়ে গেল বাইরে। দিল্লী, লখনৌ, মাদ্রাজ, হায়দ্রাবাদ, লন্ডন… এখানে কোথাও কাশফুল ফোটেনা। কোথাও মহালয়ার দিন ভোরে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের আওয়াজ রেডিও থেকে ভেসে আসেনা। এখন অবশ্য সব টিভি চ্যানেলে একটা না একটা মহিষাসুর-মর্দিনী অভিনীত হয়, কিন্তু কোনও কিছুই যেন সেই রেডিওতে মহালয়া শোনার অনুভূতি ফিরিয়ে দিতে পারেনা।
দুর্গাপূজা, প্রেম ও এক অধুরী কাহানী
পুজো আসছে, আর বাকি ১৩ দিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখলেই এই ধরনের পোস্ট চোখে পড়ছে। আমরা যারা বাইরে থাকি, তাদের কাছে পুজো মানে কিন্তু বাড়ি ফেরার আনন্দ। আলোয় মোড়া আমার খুব চেনা এই শহর, চেনা-অচেনা সব মানুষ, ভিড়, একরাশ হাসিমুখ, প্যান্ডেলের বাইরে লম্বা লাইন, ঢাকের আওয়াজ, ধুনোর গন্ধ…সব মিলে মিশে একটা অন্যরকমের ভালোলাগা। তাই আমার বন্ধু যখন আমাকে এই লেখাটা লিখতে বলল, সঙ্গে জুড়ে দিলো যে একটু নস্টালজিয়ার ছোঁয়া চাই কিন্তু, আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে জুলফিতে আর দাড়িতে রূপোলী ছোঁয়া দেখে চমকে উঠে, বাড়তে থাকা পেটের ওপর হালকা করে হাত বুলিয়ে নিজের মনেই গেয়ে উঠলাম “আমার যে দিন ভেসে গেছে…”।
স্মৃতি সুধা
আকাশটা যেন আরও কাছে চলে এসেছে।সামনের সবুজ ফাঁকা জায়গাটার বেশীরভাগটাই আজ কংক্রিটের দখলে।আজকাল সবকিছুই যেন অন্যরকম হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ করে শীতটাও কেমন যান তাড়াতাড়ি চলে গেল। বসন্ত এসে গেছে। এক অদ্ভুত গুমোট ভাব। গতকাল এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে, আজকে তার সামান্য রেশ মাত্র নেই। একটা হাল্কা হাওয়া তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে।
রাজযোটক
১
“সেই দশটা বেজে গেলো, যতই তাড়াতাড়ি করি কিছু না কিছু করে দেরি হয়েই যাবে” – গজগজ করতে করতে শোভনা এপার্টমেন্টের তিনতলার ফ্ল্যাটে ঢুকল সরিৎ| রবিবার একলা মানুষের বাজার করতে বেশী সময় লাগে না -তবে পাঁচটা লোকের সাথে দু-পাঁচ মিনিটের কথায় ঘড়ির কাঁটা ধোঁকা দিয়ে যায়|সরিৎ ঘরে ঢুকে পরের কয়েক মিনিটে বাজারটা তুলে ফেলে আর আধ বোতল জল গলায় ঢেলে ল্যাপটপটা নিয়ে বসে পড়ল |
শুভ নববর্ষ
আজ থেকে প্রায় বছর পাঁচেক আগে আমরা ‘ও কলকাতা’ শুরু করেছিলাম পয়লা বৈশাখের দিন। খুবই সাধারণ, আড়ম্বরহীন একটা পোস্ট – এসে গেল ‘ও কলকাতা’র সাইট এবং সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যতটুকু নিজেদের বলা যায়। কয়েক বছর কেটে গেছে – অনেক নতুন, পুরনো লেখক ওয়েব সাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন তাঁদের রচনাশৈলীতে। আমরাও অনেকরকম পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছে – হয়ত সব সময়ে নিয়মিত থাকতে পারিনি, কিন্তু আপোষ করিনি আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টায়। সময়ের সাথে দেখেছি অন্য কিছু ওয়েব পত্রিকাও অবয়ব বদলেছে।বদলেছি আমরাও। আজ অনেক বেশি মানুষ বাংলায় টাইপ করেন, পড়েন – অস্বীকার করতে অসুবিধে নেই যে ডিজিটাইজেশনের পথে আমরা সবাই হাঁটছি একটু একটু করে। সেই যাত্রাপথে আমাদের নতুন উপস্থাপনা – আমাদের “ওকলকাতা’ মোবাইল অ্যাপ। আপাতত শুধু অ্যান্ড্রয়েড প্লাটফর্মের জন্য শুরু হলেও আমাদের ইচ্ছা অন্যান্য মোবাইল প্লাটফর্ম বা অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যেও কি করে এই অ্যাপটিকে পৌঁছে দিতে পারি।
কলকাতা কেন পুরনো হয় না
কলকাতা একটা গল্পের মত – এক একটি দৃশ্যের পিছনে, খুব চেনা পরিচিত কিছু মানুষ, কিছু ঘটনা, কিছু স্মৃতি, সব মিলেমিশে একাকার। সময়ের সাথে সাথে আমরা বদলাচ্ছি, বদলাচ্ছে কলকাতাও – এখন কলকাতা বলতে হয়তো নতুন হাইরাইজ, নতুন রাস্তা, ফ্লাইওভার, কিন্তু আমার কাছে নতুন করে শহরের সাথে আলাপ হওয়ার গল্পগুলো এখনও একই রকম থেকে গেছে। কত বছরের পুরনো সব ছবি -অথচ নতুন করে তুললেও তাতে ক্লান্তি নেই। কেন – এ প্রশ্নের সদুত্তর নেই
বিরূপাক্ষ কথা (তৃতীয় পর্ব)
বিরূপাক্ষ কথা #১১
কফির কাপটা সশব্দে টেবিলে রেখে চলে যাওয়ার সময় বউ বলে উঠলো, “কাল থেকে নিজের কফি নিজেই বানিয়ে নিও। আমার হাতের কফি তো তোমার মুখে রোচেনা।” কফি বানাত বটে বিরূপাক্ষ বাবুর মা। সারা বাড়ি ম ম করতো কফির খোশবু তে। কফি আসতো বাবার পছন্দের এক দোকান থেকে। সময় পাল্টাতে কফির স্বাদ ও পাল্টে গেল। বাবা কফি খাওয়া ছেড়েই দিয়েছিলেন। কাপে চুমুক দিয়ে, বিস্বাদে, মুখ বিকৃত করে বিরূপাক্ষ আপনমনে বলে উঠলেন, “আজ অফিস ফেরতা বাবার পছন্দের সেই কফির দোকানটা হয়ে ফিরব।” বসার ঘরের ফটো ফ্রেম থেকে বিরূপাক্ষ বাবুর বাবা খুক করে হেসে উঠলেন।
বিরূপাক্ষ কথা #১২
বিরূপাক্ষ কথা (দ্বিতীয় পর্ব)
বিরূপাক্ষ কথা #৬
ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বিদেশে একটা ভালো চাকরি পেয়েছিলেন বিরূপাক্ষ বাবু। শত হোক, শিবপুর কলেজের সেরা ছাত্রদের মধ্যে একজন। যাওয়ার সব ঠিক, হঠাৎ বেঁকে বসলেন বিরূপাক্ষ। যে শহরের অলি গলি ওনার নিজের, যে শহরের প্রত্যেকটা মানুষ কোথাও না কোথাও গিয়ে তার নিজের লোক, সেই শহর ছেড়ে যাওয়া যায় নাকি?